রক্তদানের শর্তগুলো পূরণ হয়ে থাকলে যেকোনো সুস্থ ব্যক্তি তিন-চার মাস পর এক ব্যাগ (৪৫০ মিলিলিটার) রক্ত দিতে পারবেন। এক ব্যাগ রক্ত শরীরের মোট রক্তের মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ। এই পরিমাণ রক্ত কাউকে দিলে কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই। রক্তদানের ফলে সুস্থ মানুষ কখনো অসুস্থ হয়ে পড়েন না। প্রত্যেক সুস্থ মানুষের শরীরের লোহিত রক্তকণিকাগুলো স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ৮০ থেকে ১২০ দিন পরপর ধ্বংস হয় এবং প্রতিনিয়ত নতুন নতুন রক্তকণিকা তৈরি হতে থাকে।
রক্তের প্রয়োজন হলে আত্মীয়, বন্ধু বা পরিচিত ব্যক্তিদের থেকে নেওয়াই ভালো। পেশাদার রক্তদাতার রক্ত নিরাপদ না-ও হতে পারে। রক্ত দেওয়ার আগে খেয়াল রাখতে হবে—দাতার বয়স যেন ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হয় শরীরের ওজন হতে হবে স্বাভাবিক (অন্তত ৫০ কেজি)। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে। রক্তচাপ এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিক থাকতে হবে।
যাঁরা রক্ত দিতে পারবেন না: বড় কোনো রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি, স্নায়ুতন্ত্রের রোগ এবং রক্তচাপ অস্বাভাবিক থাকলে রক্ত দিতে পারবেন না। যাঁরা ইনসুলিন নেন, তাঁদেরও রক্ত দেওয়া উচিত নয়। আগে ব্যবহৃত সুচের মাধ্যমে কোনো ওষুধ বা নেশাদ্রব্য গ্রহণকারী ব্যক্তিও রক্ত দিতে পারবেন না।
রক্তদাতার জন্য পরামর্শ
* একদম খালি পেটে কিংবা একেবারে ভরা পেটে রক্ত দেওয়া উচিত নয়। হালকা খাবার গ্রহণের আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে রক্ত দিতে হবে।
* স্বাভাবিকের চেয়ে দু-তিন গ্লাস বেশি পানি পান করুন, রক্তদানের আগেই।
* রক্ত দেওয়ার পর অন্তত ৩০ মিনিট বিশ্রাম নিন। সেদিন গাড়ি বা সাইকেল চালানোসহ যেকোনো ভারী কাজ থেকে বিরত থাকুন।
* ধূমপায়ী ব্যক্তির রক্ত নিলে রোগীর কোনো সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে ধূমপায়ী রক্তদাতা যেদিন রক্ত দেবেন, সেদিন তাঁর নিজের নিরাপত্তার জন্য ধূমপান থেকে বিরত থাকা উচিত।
* রক্তসঞ্চালনের আগে রোগী ও রক্তদাতার রক্তের গ্রুপ মেলানোর পাশাপাশি ক্রস ম্যাচিং ও স্ক্রিনিং পরীক্ষা জরুরি। এ পরীক্ষায় জানা যায়, দাতার রক্তে কোনো রক্তবাহিত রোগ আছে কি না।
* তাপে রক্তকণিকা নষ্ট হয়ে যায়। তাই হিমায়িত রক্ত কখনো গরম করা উচিত নয়। ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত আনার ৩০ মিনিটের মধ্যে রক্তসঞ্চালন শুরু করতে হবে এবং ৪ ঘণ্টার মধ্যে শেষ করতে হবে।
ডা. সৈয়দা মাসুমা রহমান
রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
/প্রথম আলো