করোনা সন্দেহভাজনদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের নির্দেশ রাষ্ট্রপতির


কিশোরগঞ্জে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে এমন সন্দেহভাজনদের হোম কোয়ারেন্টাইনে না রেখে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতির এ নির্দেশ পেয়ে শনিবার ও গতকাল রবিবার জেলার অষ্টগ্রাম ও ভৈরবে দুটি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টইন ক্যাম্প খোলা হয়েছে।
যারা হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন, তাদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হচ্ছে। এ ক্যাম্পে তারা ১৪ দিন আইসোলেশন বা বিচ্ছিন্ন থাকবেন। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী ও পুলিশের সহযোগিতায় এ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। গতকাল রবিবার বিকেলে জেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে কমিটি সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় যখন যা করা দরকার তা-ই করা হচ্ছে।
জানা গেছে, যারা হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন, তাদের অনেকেই স্বাস্থ্য বিভাগের বিধিনিষেধ মানছেন না। কোয়ারেন্টাইনে থাকা কেউ কেউ বাড়ির বাইরে চলে যাচ্ছেন। আবার পরিবারের  অন্য সদস্যের সংস্পর্শে চলে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের পক্ষেও সবসময় এগুলি নজরদারি করা সম্ভব হচ্ছে না। এ উদ্বেগ থেকে রাষ্ট্রপতি এ নির্দেশনা দেন বলে জানা গেছে। 
সিভিল সার্জন ডা. মো. মুজিবুর রহমান জানান, জেলার অষ্টগ্রামের আব্দুল্লাহপুরের একটি স্কুল ও ভৈরবের ট্রমা হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইন ক্যাম্প শনিবার থেকে চালু করা হয়েছে। এরই মধ্যে অষ্টগ্রামে যে ৯ জন বিদেশফেরত হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন, তাঁদের মধ্যে আটজনকে  আব্দুল্লাহপুর কোয়ারেন্টাইন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাকি একজনও নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আর ভৈরবের ৫৩ জনকে ট্রমা হাসপাতালের ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন চালু করতে হলে স্বাস্থ্য বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি সবার সমন্বয় দরকার। বর্তমানে আমরা সেইভাবে কাজ করছি। প্রয়োজনে আরো প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন ক্যাম্প চালু করতে হলে আমরা তাই করব। 
জানা গেছে, একটা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন চালু করতে হলে, সেখানে যারা থাকবেন, তাঁদের খাদ্য, পানি, চিত্তবিনোদনসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাখতে হয়। কিন্তু সেই সুবিধাগুলো এখনো সেখানে নিশ্চিত করা হয়নি। তবে সুবিধাগুলো কিভাবে দেওয়া যায় তার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন।
সিভিল সার্জন কার্যলয় সূত্র জানিয়েছে, গতকাল রবিবার পর্যন্ত সারা জেলায় ৯৯ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে এক ভৈরবের রয়েছে ৫১ জন, কিশোরগঞ্জ সদরে ১৮ জন, কুলিয়ারচরে ১০ জন ও অষ্টগ্রামে ৯ জন, মিঠামইনে দুজন। বাকিরা নিকলী, তাড়াইল, ইটনা ও কটিয়াদীর।
এর আগে ১২ জনকে ১৪ দিন কোয়ারেন্টইনে থাকার পর রিলিজ দেওয়া হয়েছে। যারা পর্যবেক্ষণে রয়েছেন, তাদের অধিকাংশই ইতালি থেকে দেশে ফিরেছেন। যেহেতু ভৈরব ও অষ্টগ্রামে ইতালি থাকে এমন লোকজনের সংখ্যা বেশি। তাই সেখানে নজরদারিটা বেশি করা হচ্ছে।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সৈয়দ মো. মনজুরুল হক জানিয়েছেন, তার হাসপাতালের একটি ভবনের ৪৮টি কক্ষকে ৯৬ জনের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাদের হাসপাতালে পুরুষ ও নারীদের জন্য ১০টি শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আর স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষামূলক সরঞ্জামের জন্যও চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত কিশোরগঞ্জে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী পাওয়া যায়নি। তিনি এ বিষয়ে জনসাধারণকে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, জেলার সবগুলো সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালকে করোনা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কাজেই এ নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কিছু নেই।

/কালের কন্ঠ

Section Background